সিগন্যাল কর্মীদের আন্দোলন: ঝুঁকিতে পড়েছে রেল চলাচল

Passenger Voice    |    ১২:০৩ পিএম, ২০২১-০৩-২০


সিগন্যাল কর্মীদের আন্দোলন: ঝুঁকিতে পড়েছে রেল চলাচল

রেলের সিগন্যাল কর্মীরা দিন-রাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে আসছেন। এমনকি তারা ঈদের ছুটিও পান না। তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটিও নেই। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তারা আদালতে মামলা করেছিলেন। ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর আদালতের চূড়ান্ত রায়ে তারা ৮ কর্মঘণ্টার অধিকার পান।

কিন্তু রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আদালতের রায় উপেক্ষা করে তাদের দিয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। তাদের এই বেআইনি অবস্থানের বিপরীতে কেউ প্রতিবাদ করলেই তার বিরুদ্ধে বদলিসহ নেওয়া হচ্ছে নানা ব্যবস্থা। স্বাভাবিক কারণেই এ পরিস্থিতিতে ৫৫২ সিগন্যাল কর্মী, তাদের প্রায় পাঁচশ সহকর্মী (খালাসি) এবং সিগন্যাল রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত ১৫৯ জন আদালতের রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জোট বেঁধেছেন। তারা ৬ মার্চ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ স্থগিত রেখেছেন। দাবি না-মানা হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং একইসঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন।

বলা বাহুল্য, সিগন্যাল কর্মীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৬ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়। এ অবস্থায় চালক ও গার্ডরাও ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন না-চালানোর জন্য কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে রেলে যে অচলাবস্থা চলছে, তার অবসান হওয়া জরুরি। আমরা মনে করি, সিগন্যাল কর্মীদের দিয়ে ২৪ ঘণ্টা কাজ করিয়ে নেওয়ার বিষয়টি শুধু অনৈতিক নয়, অমানবিকও বটে।

শুধু তাই নয়, এটি আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। বলার অপেক্ষা রাখে না, ২৪ ঘণ্টা কাজ করা মানে তা শুধু দৈহিক নয়, মানসিক সংকটেরও জন্ম দেয়। সিগন্যাল কর্মীরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, অনেকে কঠিন রোগে ভুগছেন। উচ্চ আদালতও তার রায়ে বলেছেন: ২৪ ঘণ্টা কর্মব্যবস্থা অনৈতিক, অবৈধ এবং মানবাধিকার পরিপন্থি। আদালত তার রায়ে ৮ কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। উচ্চ আদালতের এই রায় উপেক্ষা করা মানে আইনের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, রেল কি তাহলে দেশের আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে থাকা কোনো প্রতিষ্ঠান?

রেলের সিগন্যাল কর্মীদের আন্দোলনের ফলে রেল চলাচলে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তাতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। আমরা চাইব, সে ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই চলমান অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে রেল কর্তৃপক্ষ আদালতের রায় অনুযায়ী সিগন্যাল কর্মীদের দিয়ে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকবে। বিষয়টি শুধু রেলের কর্মীস্বার্থ নয়, জনস্বার্থের সঙ্গেও সম্পর্কিত।